আমাদের শরীরের রক্তচাপ স্থিতিশীল থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যাকে আমরা সাধারণত ‘লো প্রেসার’ বলে থাকি। রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ mmHg-এর নিচে নেমে যায়, তাহলে এটি নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে লো প্রেসার সাধারণ ব্যাপার হতে পারে, তবে অনেকের জন্য এটি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি জ্ঞান হারানোর কারণও হতে পারে। তাই লো প্রেসার হলে কী করা উচিত, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।.
লো প্রেসার কী এবং এটি কেন হয়?
রক্তচাপ হলো এমন একটি পরিমাপ, যা আমাদের হৃদযন্ত্র কতটুকু চাপ দিয়ে শরীরে রক্ত প্রবাহিত করছে তা নির্ধারণ করে। যখন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে যায়, তখন শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এই অবস্থায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় মাথা ঘোরা বা চোখের সামনে অন্ধকার দেখার মতো অনুভূতি হতে পারে।
লো প্রেসার হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। শরীরে পানির অভাব বা ডিহাইড্রেশন হলে রক্তের পরিমাণ কমে যায়, ফলে রক্তচাপ কমতে পারে। এছাড়া কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, দীর্ঘক্ষণ না খাওয়া, হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়া কিংবা কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেও লো প্রেসার হতে পারে।
লো প্রেসারের লক্ষণগুলো কী কী?
লো প্রেসার হলে সাধারণত কিছু স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি হালকা মাত্রার হতে পারে, আবার কিছু মানুষের জন্য এটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
✔ মাথা ঘোরা বা ভারী লাগা
✔ দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা
✔ চোখে ঝাপসা দেখা
✔ বুক ধড়ফড় করা
✔ হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
✔ বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে যাওয়া
✔ জ্ঞান হারানো
যদি এসব লক্ষণ ঘন ঘন দেখা দেয় বা কোনো গুরুতর সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে?
নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার এই অবস্থায় খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে। তাই চলুন জেনে নিই, প্রেসার লো হলে কী খাওয়া উচিত।
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরে পানির অভাব হলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে গরমের সময় বা শারীরিক পরিশ্রমের পর প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, অথবা ওআরএস (ORS) পান করা উচিত।
২. লবণযুক্ত খাবার খান
লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই লো প্রেসার হলে অল্প লবণ মিশিয়ে শরবত পান করা বা লবণযুক্ত স্যুপ খাওয়া উপকারী হতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি লবণ খাওয়া ঠিক নয়।
৩. মিষ্টি বা চিনি খাওয়ার অভ্যাস করুন
রক্তচাপ কমে গেলে চিনি বা মধু মিশ্রিত গরম পানি পান করা বা লেবুর শরবত খাওয়া দ্রুত উপকার দিতে পারে। বিশেষ করে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার কমে গেলে রক্তচাপও কমতে পারে, তাই তাদের উচিত সঙ্গে মিষ্টি কিছু রাখা।
৪. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করুন
চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে সমাধান নয়, তাই লো প্রেসার হলে মাঝেমধ্যে কফি বা গরম চা পান করা যেতে পারে।
লো প্রেসারে ঘরোয়া সমাধান
অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পর হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরতে পারে বা প্রেসার কমে যেতে পারে। তাই আস্তে আস্তে অবস্থান পরিবর্তন করা উচিত।
হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যদি রক্তচাপ খুব কমে যায়, তাহলে শুয়ে পড়ে পা উঁচু করে রাখুন। এটি রক্তকে দ্রুত হৃদযন্ত্রের দিকে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে এবং মাথা ঘোরার অনুভূতি কমায়।