Bangla Helpline – বাংলা হেল্প লাইন

সাম্প্রতিক সময়ে, টরেন্টোতে বাংলাদেশিদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই শরণার্থী হিসেবে আসছেন, নতুন জীবন শুরু করার আশায়। তাদের আসার পেছনে নানা কারণ আছে, যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় নির্যাতন, এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

অজানা গল্প, লুকানো ক্রন্দন:

কানাডা আসার আগে, এই মানুষগুলোকে অভাবনীয় কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করে। কানাডায় ঢোকার জন্যে মানুষ কতটা পাগল হতে পারে তা আমি বিভিন্ন জনের বর্ণনায় শুনেছি। বৈধ উপায়ে না হয়ে অবৈধ উপায়ে হলেও কানাডায় আসতেই হবে এরকম উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, মা তার নবজাতক বাচ্চাকে ফেলে কানাডায় চলে এসেছে, জনৈক ভদ্রলোক তার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আর বউ ফেলে কানাডায় ভিজিটর ভিসায় আসছেন। কেউ কেউ আবার জমি জমা বিক্রি করে এসে পরবর্তীতে অবৈধ হয়ে বছরের পর বছর কাগজ বিহীন ভাবে কানাডায় দিন যাপন করছেন। এরকম আরও অনেক অজানা গল্প রয়েছে।

আপাত দৃষ্টিতে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে হয়তো বাংলাদেশে পরিবারের জন্যে সুখের যোগান দিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকার ফলে তারা তাদের পরিবার থেকে দূরে থেকে আদৌ কি সুখে আছেন? আর বাংলাদেশে তাদের পরিবার কি আসলেই টিকে আছে?

টরেন্টোতে দালালদের ফাঁদ:

টরেন্টোতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে, রিফিউজি ক্লেইম করার জন্য দালালদের ব্যবহারও বেড়েছে। । টরেন্টোতে আসার পর, অনেক বাংলাদেশি রিফিউজি ক্লেইমেন্ট দালালদের শিকার হন। এই দালালরা তাদের প্রতারিত করে অর্থ আয় করে। তারা রিফিউজি ক্লেইম করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে।

দালালদের ফাঁদ:

  • অতিরিক্ত ফি: দালালরা রিফিউজি ক্লেইম করতে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত ফি দাবি করে।
  • ভুল তথ্য: দালালরা প্রায়শই ভুল তথ্য প্রদান করে এবং রিফিউজি ক্লেইমেন্টদের বিভ্রান্ত করে।
  • আইনি জটিলতা: দালালরা আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় রিফিউজি ক্লেইমেন্টদের আইনি জটিলতায় ফেলে দেয়।
  • শোষণ: দালালরা প্রায়শই অভিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নেয় এবং তাদের শোষণ করে।

ভিজিটর স্ট্যাটাসের মানুষের দুর্দশা:

অনেক রিফিউজি ক্লেইমেন্ট ভিজিটর স্ট্যাটাসে কানাডায় আসেন। এই স্ট্যাটাসে তাদের কাজ করার অনুমতি নেই। দালালদের কাছে টাকা দিয়ে রিফিউজি ক্লেইম করার পর, যখন তাদের ক্লেইম প্রসেসিং হয়, তখন তাদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ে, তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করার সুযোগ থাকে না।

রিফিউজি ক্লেইম ও দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই:

দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং রিফিউজি ক্লেইম প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: রিফিউজি ক্লেইমেন্টদের দালালদের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করা।
  • আইনি সহায়তা: রিফিউজি ক্লেইমেন্টদের আইনি সহায়তা প্রদান করা।
  • সরকারি পদক্ষেপ: দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রিফিউজি ক্লেইম প্রক্রিয়া সহজতর করা।

রিফিউজি ক্লেইম কিভাবে করবেন:

১. পোর্ট অফ এন্ট্রি (Port of Entry) : কানাডায় প্রবেশের সময়, আপনি ইমিগ্রেশন অফিসারকে জানাতে পারেন যে আপনি রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় চান।

২. ইনল্যান্ড (Inland): আপনি যদি ইতিমধ্যে কানাডায় বৈধভাবে উপস্থিত থাকেন (যেমন ভিজিটর ভিসায়), আপনি IRCC (Immigration, Refugees and Citizenship Canada) কে রিফিউজি ক্লেইম জমা দিতে পারেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • পাসপোর্ট
  • জন্ম সনদ
  • পরিচয়পত্র
  • রিফিউজি ক্লেইমের কারণ সম্পর্কে একটি বিবৃতি
  • সহায়ক প্রমাণ (যেমন, নির্যাতনের প্রমাণ, রাজনৈতিক হুমকির প্রমাণ)

প্রক্রিয়া:

  • আপনার রিফিউজি ক্লেইম IRCC কর্তৃক পর্যালোচনা করা হবে।
  • আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে, যেখানে আপনাকে আপনার ক্লেইম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
  • IRCC আপনার ক্লেইম গ্রহণ করবে কিনা তা নির্ধারণ করবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • রিফিউজি ক্লেইম করার জন্য দালালের প্রয়োজন নেই।
  • IRCC রিফিউজি ক্লেইম করার জন্য বিনামূল্যে সহায়তা প্রদান করে।
  • আপনি যদি দালালের শিকার হন, তাহলে আপনি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

টরেন্টোতে রিফিউজি ক্লেইম করার জন্য দালালদের ফাঁদ এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রস্তুতি এবং সচেতনতার মাধ্যমে, আপনি আপনার রিফিউজি ক্লেইমে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন।

উল্লেখযোগ্য লিঙ্ক:

  • IRCC: রিফিউজি ক্লেইম: https://www.canada.ca/en/immigration-refugees-citizenship/services/refugees/claim-protection-inside-canada/apply.html
  • বাংলাদেশ কানাডিয়ান কমিউনিটি সার্ভিসেসhttps://www.bccs.org/
  • স্থানীয় আইনি সহায়তা কেন্দ্রhttps://www.legalaid.on.ca/