বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বন্যার পর আবার মুখরিত হচ্ছে রাতারগুল, সাদাপাথর এবং বিছনাকান্দি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সিলেট এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, রাতারগুল, সাদাপাথর এবং বিছনাকান্দি সিলেটের পর্যটন খাতকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্বচ্ছ পানির ধারা এবং সবুজের বিস্তার পর্যটকদের প্রতিদিন এই অঞ্চলে আকৃষ্ট করছে।
রাতারগুলে পর্যটকদের ভিড়
রাতারগুল জলাবন, যা বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন, বর্তমানে প্রকৃতি প্রেমীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। নৌকায় চড়ে বনের ভিতর দিয়ে ভ্রমণের সুযোগ, গাছের শিকড়ের জটিলতা, এবং পাখির কোলাহল পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। এক বিদেশি পর্যটক জানান, “রাতারগুলে এসে আমি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি। এ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ আগে কখনও দেখিনি।”
সাদাপাথরের স্বচ্ছ জলে পর্যটকদের আনন্দময় সময়
সাদাপাথর এলাকা এখন সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানকার স্বচ্ছ পানিতে পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন। বিশেষত শীতল জলে সাঁতার কাটা এবং প্রাকৃতিক পাথরের সাথে ফটোশুট করার জন্য দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিছনাকান্দিতে মানুষের ঢল
বিছনাকান্দি, যেখানে পাহাড়ি ঝর্ণা এবং নদীর মিলন ঘটে, সেই এলাকাও পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় উপরের দিকে অবস্থান করছে। বর্ষাকালে এখানে পানি এবং পাহাড়ের মিতালি তৈরি করে এমন এক দৃশ্য, যা ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বিছনাকান্দির শীতল জলে সময় কাটানোর জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। সিলেটের স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
সিলেটের পর্যটনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
সিলেটের এই স্থানগুলো পর্যটনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, যা আগামীতে আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে। স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের সুবিধার্থে তাদের সেবার মান উন্নত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। স্থানীয় হোটেল মালিকরা এখন আশাবাদী যে পর্যটকরা আবার ফিরে আসবেন। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রুতবাহ হোটেল ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বন্যায় আমাদের ব্যবসা ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু এখন দেশ স্থিতিশীল হওয়ায় পর্যটকদের আগমন কিছুটা বেড়েছে। আমরা আশা করছি, শীত মৌসুমে প্রচুর পর্যটক আসবেন, যা আমাদের ক্ষতিগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।”
সিলেটের এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।