ইউরোপের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি স্পেন প্রতি বছর তিন লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া আগামী তিন বছর অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী এলমা সাইজ।
স্পেনের জনসংখ্যার গড় বয়স বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষম জনসংখ্যার ঘাটতি শ্রমবাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মী সংকট দূর করতে অভিবাসীদের নিয়মিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বামপন্থি জোট সরকারের নেতৃত্বাধীন দেশটি।
অভিবাসনমন্ত্রী এলমা সাইজ বলেন, ‘‘স্পেন হয় একটি উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে, তা না হলে একটি কট্টর ও দরিদ্র দেশ হয়ে যাবে। আমরা একটি উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ দেশ হয়ে ওঠার পথ বেছে নিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, স্পেনের কল্যাণ রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখ কর প্রদানকারী বিদেশি কর্মী প্রয়োজন।
কর্মসংস্থান এবং ভিসা প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন
সরকার এই সিদ্ধান্তের আওতায় অভিবাসন সংক্রান্ত আইনে সংস্কার আনবে। অভিবাসীদের বসবাসের অনুমতির প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করা হবে। ফলে, অভিবাসীরা স্বনির্ভর কর্মী কিংবা বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে তাদের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
অভিবাসনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমরা পেশাগত দক্ষতা অনুযায়ী বিদেশি কর্মীদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করতে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের চাহিদামাফিক দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে সহায়তা করতে চাই।’’
সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে অভিবাসীদের বসবাসের ন্যূনতম সময়সীমা তিন বছর থেকে কমিয়ে দুই বছর করা। দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ইস্যুর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ভিসার মেয়াদ তিন মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করা হবে। শিক্ষার্থী ভিসাধারীরা সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পাবেন এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।
অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
স্পেনের অর্থনীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। সম্প্রতি তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ। বিশেষত, লাতিন আমেরিকা থেকে আসা দক্ষ অভিবাসীরা প্রযুক্তি ও পর্যটন খাতে শ্রমঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ফিচ রেটিং অনুসারে, ২০২২ সালে স্পেনে নিট অভিবাসনের সংখ্যা অতীতের দশকগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলে, কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেড়েছে, যা প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হয়েছে।
স্পেনের এই পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। যেখানে ইতালি এবং জার্মানির মতো দেশগুলো সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে, সেখানে স্পেন অভিবাসীদের গ্রহণে একটি মানবিক এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকরী পথ বেছে নিয়েছে।