e-Apostille Bangladesh: কিভাবে আবেদন করবেন ও কত টাকা খরচ হবে?

e-apostille

বিদেশে চাকরি, পড়াশোনা, ইমিগ্রেশন বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য নিজ দেশের নথি বিদেশে ব্যবহার করতে হলে সেই নথির সত্যতা যাচাই অপরিহার্য। সাধারণত অ্যাপোস্টিল বা লিগ্যালাইজেশন প্রক্রিয়া সেই সত্যতা নিশ্চিত করে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন কাগজভিত্তিক অ্যাপোস্টিলের পাশাপাশি এসেছে e-Apostille (ই-অ্যাপোস্টিল)—যা নথি যাচাইকে করেছে দ্রুত, নিরাপদ ও সম্পূর্ণ ডিজিটাল।

e-Apostille হলো কোনো নথির ইলেকট্রনিক অ্যাপোস্টিল সনদ, যা ডিজিটাল সিগনেচার ও নিরাপদ অনলাইন যাচাইয়ের মাধ্যমে নথির সত্যতা নিশ্চিত করে। Hague Convention–এ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নথি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের জন্য এই e-Apostille বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কাগজের পরিবর্তে সম্পূর্ণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এটি ইস্যু করা হয়।

e-Apostille কেন দরকার?

e-Apostille হলো একটি ডিজিটাল অ্যাপোস্টিল, যা আন্তর্জাতিকভাবে নথির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি হেগ কনভেনশন (Hague Convention 1961)–এর আওতায় স্বীকৃত এবং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কোম্পানি, আদালত বা সরকারি সংস্থার কাছে নথি গ্রহণযোগ্য করে তোলে। e-Apostille ব্যবহার করলে কাগজভিত্তিক অ্যাপোস্টিলের তুলনায় সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়, কারণ পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যায় এবং কাগজ হারানোর ঝুঁকি থাকে না। QR কোড ও ডিজিটাল সিগনেচারের মাধ্যমে নথি সহজে যাচাই করা যায় এবং জাল নথি শনাক্ত করা যায়। বিদেশে চাকরি, পড়াশোনা, ভিসা, ইমিগ্রেশন, ব্যবসা বা চুক্তিপত্র বৈধকরণের জন্য e-Apostille দ্রুত, নিরাপদ এবং সুবিধাজনক সমাধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাপোস্টিল (Apostille) প্রক্রিয়া কীভাবে করা হয়

ধাপ ১: নথি যাচাই (Document Verification)

প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে কোন নথি অ্যাপোস্টিলের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত নিচের নথি গ্রহণযোগ্য:

  • জন্ম/বিবাহ/মৃত্যু সনদ
  • শিক্ষাগত সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট
  • চারিত্রিক সনদ (Police Clearance)
  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি
  • ব্যবসায়িক নথি
  • আদালতের রায় বা অ্যাফিডেভিট

নথি আসল এবং সম্পূর্ণ হতে হবে; অসম্পূর্ণ বা খসড়া নথি গ্রহণযোগ্য নয়।

ধাপ ২: নোটারী পাবলিক সত্যায়ন (Notary Public Authentication)

নথি প্রথমে নোটারী পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত হয়।

  • নোটারি নথির মূলতা যাচাই করে সিল বা স্বাক্ষর প্রদান করে।
  • এটি প্রাথমিক বৈধতার একটি ধাপ।

ধাপ ৩: সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (Relevant Authority Verification)

নথির ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই করে:

  • শিক্ষাগত নথি → শিক্ষা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়
  • জন্ম/বিবাহ সনদ → নিবন্ধন অফিস
  • ব্যবসায়িক নথি → চেম্বার অব কমার্স বা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর

এটি নিশ্চিত করে যে নথি যথাযথ কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত।

ধাপ ৪: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীল (Ministry of Foreign Affairs Seal)

বাংলাদেশে অ্যাপোস্টিল প্রদানকারী মূল কর্তৃপক্ষ হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MoFA)

  • MoFA নথি যাচাই করে সরকারি সিল প্রদান করে।
  • এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য অপরিহার্য।

ধাপ ৫: অ্যাপোস্টিল স্ট্যাম্প বা সার্টিফিকেট (Apostille Stamp/Certificate)

হেগ কনভেনশন অনুযায়ী Apostille Sticker বা Certificate নথির সাথে যুক্ত করা হয়।

  • ডিজিটাল e-Apostille হলে PDF আকারে ডাউনলোডযোগ্য।
  • নথিতে QR কোড বা Unique Document ID থাকে, যা অনলাইনে যাচাই করা যায়।
  • এটি নিশ্চিত করে যে নথি বিদেশে বৈধ এবং আলাদা লিগ্যালাইজেশনের প্রয়োজন নেই (হেগ কনভেনশনভুক্ত দেশে)।

ধাপ ৬: যাচাই ও ব্যবহার (Verification & Usage)

  • ডকুমেন্ট গ্রহণকারী দেশ অনলাইনে বা QR স্ক্যানের মাধ্যমে নথি যাচাই করে।
  • বৈধতা নিশ্চিত হলে নথি বিদেশে চাকরি, পড়াশোনা, ভিসা বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা যায়।

বাংলাদেশে অ্যাপোস্টিল করতে কত টাকা লাগে? (বর্তমান ফি)

বাংলাদেশে বর্তমানে (কাগজভিত্তিক) Apostille ফি হলো—

✅ সাধারণ আবেদন: প্রতি ডকুমেন্ট ৮০০ টাকা

✅ জরুরি আবেদন: প্রতি ডকুমেন্ট ১,২০০ টাকা

👉 e-Apostille চালু হলে ফি একই থাকতে পারে বা কিছুটা কম হতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ) – Apostille / e-Apostille

১. অ্যাপোস্টিল (Apostille) কী?

উত্তর: Apostille হলো একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সনদ, যা নথির সত্যতা নিশ্চিত করে। হেগ কনভেনশন (Hague Convention 1961)–এর অন্তর্গত দেশগুলোতে এই সনদ থাকলে নথি বিদেশে বৈধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়। e-Apostille হলে এটি ডিজিটাল PDF আকারে পাওয়া যায় এবং অনলাইনে যাচাই করা যায়।

২. কোন কোন ডকুমেন্ট অ্যাপোস্টিল করা যায়?

উত্তর: সাধারণত নিচের নথি অ্যাপোস্টিলযোগ্য—

  • জন্ম / বিবাহ / মৃত্যু সনদ
  • শিক্ষাগত সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট
  • চারিত্রিক সনদ (Police Clearance)
  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি
  • আদালতের রায় বা অ্যাফিডেভিট
  • ব্যবসায়িক নথি বা চুক্তিপত্র

যে নথি করা যায় না: ব্যক্তিগত চিঠি, খসড়া নথি, কিছু ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

৩. অ্যাপোস্টিল এবং অ্যাটেস্টেশনের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর:

  • অ্যাপোস্টিল: হেগ কনভেনশনভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ। কাগজ বা ডিজিটাল উভয়ভাবে পাওয়া যায়।
  • অ্যাটেস্টেশন: কেবল নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাস বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈধতা নিশ্চিত করে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সীমিত।

৪. অ্যাপোস্টিল করতে কতদিন সময় লাগে?

উত্তর:

  • কাগজভিত্তিক Apostille: সাধারণত ৭–১৪ কার্যদিবস
  • e-Apostille (ডিজিটাল): কয়েক ঘণ্টা থেকে ২–৩ দিন (ডিজিটাল সিস্টেম চালু হলে)

৫. বাংলাদেশে কোথা থেকে অ্যাপোস্টিল করানো যায়?

উত্তর: বাংলাদেশে Apostille / লিগ্যালাইজেশন সেবা প্রদান করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Foreign Affairs, MoFA)। শিক্ষাগত, ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত নথি যাচাই ও সীলের জন্য MoFA–এর নির্দিষ্ট শাখায় আবেদন করতে হয়।

৬. আমার শুধু ট্রান্সক্রিপ্ট আছে, সেটা কি অ্যাপোস্টিল করা যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, শিক্ষাগত নথি যেমন ট্রান্সক্রিপ্ট, ডিগ্রি সার্টিফিকেট ইত্যাদি অ্যাপোস্টিলযোগ্য। তবে ট্রান্সক্রিপ্ট মূল সনদের সাথে মিলিয়ে যাচাই করা হয়।

৭. আমি বিদেশে থাকি, বাংলাদেশি ডকুমেন্ট অ্যাপোস্টিল করাতে পারবো?

উত্তর: হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে বা আপনার নির্দিষ্ট প্রতিনিধি (Power of Attorney–এর মাধ্যমে) বাংলাদেশে MoFA–এর শাখায় আবেদন করতে হবে। e-Apostille চালু হলে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে করা সম্ভব হবে এবং PDF আকারে ডাউনলোডযোগ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *