Bangla Helpline – বাংলা হেল্প লাইন

শিক্ষার্থীদের ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনা ড. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর বঙ্গভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

শেখ হাসিনার পদত্যাগে তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থনে ক্ষমতায় আসেন তিনি। এরপর তিনি তার শাসনামলে কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হতে দেননি।

এসব সমস্যা নিয়ে দেশের মানুষ জানতে চাইলে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীদের হাসতে শোনা যায়। কেউ কেউ বললেন, দেশটা সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল। তার উত্থান সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই উপলক্ষ তৈরি হয়। যার লক্ষণ এর আগে 2018 সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আন্দোলনে (2015) দেখা গিয়েছিল। গত দেড় বছরে বাংলাদেশে কেউ শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করার সাহস করেনি। সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম দমনমূলক আইন, গুম, গ্রেফতার, হয়রানি ও চাপে কোণঠাসা। এই প্রথম শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্ররা রুখে দাঁড়ালো, স্লোগান দিল; কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ বক্তব্য ও শিক্ষার্থীদের দাবি আদালতে তোলা হয়। ওই রাতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এসে স্লোগান দিতে থাকে, ‘কে তুমি, কে আমি, রাজাকার, রাজাকার, কে বলল, কে বলল, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

গত ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দিন থেকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব দেবে ছাত্রলীগ। তারা প্রস্তুতি নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সময়ে সময়ে ছাত্রীদেরও ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

১৭ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সেই ভিডিও চিত্রটি গানপাউডারের ট্রিগারের মতো কাজ করেছে। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। ‘বুকে অনেক ঝড় বইছে, বোকে নরহু, গুলি’-র মতো স্লোগান।

আন্দোলনকারীরা হয়তো ভাবেননি যে তাদের আসলে গুলি করা হবে। সাধারণ মানুষ ভাবতেও পারেনি কয়েকদিনের মধ্যে দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হবে। ঘরের শিশু, ছাদে কিশোরী মেয়ে, বারান্দায় থাকা মানুষগুলোকে যে হত্যা করা হবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তবে ১৯ জুলাই কারফিউ সম্পর্কে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুট অন সাইটে’ জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশে যা হয়নি তা হলো; বিপুল সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়, কলেজ ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়, স্কুল ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয় যা ছিল অবর্ণনীয়।

শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ৯ দফা দাবি জানান। সেসব দাবি পূরণ না করে ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও গণগ্রেফতারের পুরনো পথ বেছে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। কয়েক দিনের মধ্যে ১০০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল  বাদ যায়নি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বকর মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুমকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অধিদফতরের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আটক করা হয়। সেখান থেকে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়।

জনগণের বিক্ষোভ ও সমন্বয়কদের অনশনের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ২রা আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের সমাবেশে ৯ দফা দাবি এক দফায় রূপান্তরিত হয়। বলা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বচ্ছসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের কারও হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, অনেকের কাছে ছিল দেশীয় অস্ত্র। ওইদিন সংঘর্ষে অন্তত ১১৪ জন নিহত হয়।

সব মিলিয়ে ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট—শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার পর ২৩ দিনে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পায় ‘অপশাসন’ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *