ডেনমার্ক উত্তর ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি জুটলান্ড উপদ্বীপের উত্তরে এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ডেনমার্কের সাথে সুইডেন ও নরওয়ে’র সীমানা রয়েছে। ডেনমার্কের সাথে যুক্ত আরও ৪৪৪টি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে বৃহত্তমগুলো হল ফুনেন, সেল্যান্ড, লোলান এবং বোর্নহোলম। ডেনমার্কের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হল কোপেনহেগেন। এখানে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক সেবাগুলো বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে পাওয়া যায়। ডেনমার্কের অর্থনীতি খুবই উন্নত। এখানে বেকারত্বের হার কম এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উচ্চ।
কেন পড়বেন ডেনমার্কে?
ডেনমার্ক একটি উন্নত দেশ। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনকারীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- কোনো টিউশন ফি নেই: ডেনমার্কের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি নেই। শুধুমাত্র কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি দিতে হয়। ডেনমার্কের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করার সুযোগ তাই অনেক শিক্ষার্থীর জন্য আকর্ষণীয়।
- উন্নত শিক্ষার মান: ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বিশ্বের অন্যতম সেরা। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ডেনমার্কে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা লাভ করতে পারে।
- সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শিক্ষা: ডেনমার্কের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী দক্ষতা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। ডেনমার্কে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা করতে শিখতে পারে।
- জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম: ডেনমার্কের জীবনযাত্রার ব্যয় অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় তুলনামূলক কম। ডেনমার্কে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে পারে।
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
ডেনমার্কে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন: ডেনমার্কের সবচেয়ে পুরনো ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ইউরোপের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেনে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
- আরহুস ইউনিভার্সিটি: ডেনমার্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটিও ইউরোপের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আরহুস ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
- টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক: ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্কে প্রকৌশল, বিজ্ঞান, ব্যবসা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
- আলবর্গ ইউনিভার্সিটি: ডেনমার্কের তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
- ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্ক: ডেনমার্কের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
কী কী বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন?
ডেনমার্কে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা দুই ধরনের: ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স। ব্যাচেলর ডিগ্রি সাধারণত 3-4 বছরের হয়, এবং মাস্টার্স ডিগ্রি সাধারণত 1-2 বছরের হয়।
ডেনমার্কে পড়ার জন্য জনপ্রিয় কিছু বিষয় হল:
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- ব্যবসা
- আইন
- চিকিৎসা
- সামাজিক বিজ্ঞান
- মানবিকতা
এছাড়াও, ডেনমার্কে আরও অনেক বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিষয়টি খুঁজে পেতে ডেনমার্কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘুরে দেখতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে। এই যোগ্যতাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত, আবেদনকারীদের নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে:
- সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।
- আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য আইইএলটিএস বা টোয়েফল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল থাকতে হবে। সাধারণভাবে বলা যায় স্নাতক ডিগ্রির জন্য সর্বনিম্ন: 6.0, ভালো স্কোর: 6.5-7.0 মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য: সর্বনিম্ন: 6.5, ভালো স্কোর: 7.0-7.5
- কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনকারীদের গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) থাকতে হবে। বিদেশে মাস্টার্স করার জন্য ন্যূনতম ৩.০০ সিজিপিএ থাকা প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে, ২.৭০ সিজিপিএও যথেষ্ট হতে পারে।
- কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনকারীদের রেফারেন্স লেটার জমা দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফর্মের সাথে নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
আবেদনের সময় কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?
আবেদনের সময় সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস লাগে:
- পাসপোর্ট
- উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
- গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) ট্রান্সক্রিপ্ট
- আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর কার্ড
- রেফারেন্স লেটার (যদি প্রয়োজন হয়)
- অফার লেটার
- টিউশন ফি পরিশোধের রশিদ
- স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)
ভিসা আবেদনের জন্য কী করতে হবে?
ডেনমার্কে পড়াশোনার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
- ডেনমার্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করুন।
- ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- ভিসার জন্য আবেদন ফি পরিশোধ করুন।
- নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিন।
- ভিসা
ভিসা আবেদনের জন্য কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?
ভিসার জন্য আবেদনের সময় সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস লাগে:
- পাসপোর্ট
- উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
- গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) ট্রান্সক্রিপ্ট
- আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর কার্ড
- রেফারেন্স লেটার (যদি প্রয়োজন হয়)
- অফার লেটার
- টিউশন ফি পরিশোধের রশিদ
- স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- স্বাস্থ্য বীমা সনদপত্র
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র
ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত কবে জানতে পারবেন?
ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত সাধারণত ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে জানানো হয়। তবে, ভিসার জন্য আবেদনের সময় ভিসা প্রসেসিংয়ের সময় বেশি লাগতে পারে।
ভিসা পাওয়ার পর কী করতে হবে?
ভিসা পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে:
- ডেনমার্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে ভিসা সংগ্রহ করুন।
- ডেনমার্কে যাওয়ার জন্য টিকিট কিনুন।
- ডেনমার্কে থাকার জায়গা খুঁজুন।
- স্বাস্থ্য বীমা কিনুন।
- ডেনমার্কে পৌঁছানোর পর ৩ দিনের মধ্যে পুলিশ স্টেশনে রেজিস্ট্রেশন করুন।
ডেনমার্কে কাজ করার সুযোগ
ডেনমার্কে পড়াশোনার পরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দেশটিতে কাজ করার সুযোগ পায়। ডেনমার্কের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে যাতে তাদের দেশটিতে কাজ করার সুযোগ পাওয়া সহজ হয়।
ডেনমার্কে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ
ডেনমার্কে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল:
- উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে: ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা শেষে, শিক্ষার্থীরা 6 মাসের জন্য ডেনমার্কে কাজ করার অনুমতি পান। এই সময়ের মধ্যে তারা যদি একটি চাকরি খুঁজে পান এবং সেই চাকরিতে কমপক্ষে 1 বছর কাজ করেন, তাহলে তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- চাকরির মাধ্যমে: ডেনমার্কে একটি চাকরি পাওয়ার পর, চাকরিদাতা নিয়োগকর্তা সেই কর্মচারীর জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন।
- পরিবারের মাধ্যমে: ডেনমার্কের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দার সাথে বিবাহিত বা সংসার করা ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও, ডেনমার্ক সরকার নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে:
- বিনিয়োগ: ডেনমার্কে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া যেতে পারে।
- গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা: ডেনমার্কে এমন দক্ষতা রয়েছে যা ডেনমার্কের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন।
ডেনমার্কে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:
- ন্যূনতম বয়স 18 বছর
- পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান
- ভাষা দক্ষতা
- অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা
ডেনমার্কে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। আবেদনকারীদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র এবং তথ্য প্রদান করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সাধারণত 6 মাস থেকে 1 বছর সময় লাগে। ভিসা প্রসেস সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে ভিজিট GlobalBridgeBD