জমি আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। জমি ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ গ্রহণ, ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে জমির মালিকানা প্রমাণের প্রয়োজন হয়। জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো খতিয়ান।
জমির খতিয়ান বা পর্চা কি?
খতিয়ান হলো সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি নথি যা জমির মালিকানা, জমির শ্রেণী, মৌজা, দাগ নম্বর, খাজনার পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য ধারণ করে। খতিয়ানকে অনেকে পর্চাও বলে।
খতিয়ানে কি কি উল্লেখ থাকে?
- মৌজার নাম
- দাগ নম্বর
- খতিয়ান নম্বর
- শ্রেণী
- মালিকের নাম
- ঠিকানা
- জমির পরিমাণ
- খাজনার পরিমাণ
- দখলকারীর নাম
- ঋণের তথ্য (যদি থাকে)
মাঠ পর্চা কি বা মাঠ পর্চা কাকে বলে?
মাঠ পর্চা হলো খতিয়ানের একটি সারসংক্ষেপ। এতে জমির মৌজা, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, শ্রেণী, মালিকের নাম, ঠিকানা, জমির পরিমাণ এবং খাজনার পরিমাণ উল্লেখ থাকে। মাঠ পর্চা সাধারণত জমির দলিলের সাথে সংযুক্ত থাকে।
খতিয়ানের প্রকারভেদ
১) সিএস খতিয়ান (Cadastral Survey):
- ব্রিটিশ আমলে ১৯১০-১৯২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় এই জরিপ পরিচালিত হয়।
- এই জরিপে খাজনার হার নির্ধারণ করা হয়।
- এই খতিয়ানকে “রেকর্ড অব রাইটস”ও বলা হয়।
সিএস খতিয়ান দুই ধরণের:
- সিএস (রেকর্ড অব রাইটস)
- সিএস (ম্যাপ)
২) এসএ খতিয়ান (State Acquisition Survey):
- ১৯৫০-৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর জমির মালিকানার নতুন রেকর্ড তৈরির জন্য এই জরিপ পরিচালিত হয়।
- এই জরিপে সিএস খতিয়ানের ত্রুটিগুলি সংশোধন করা হয়।
এসএ খতিয়ান দুই ধরণের:
- এসএ (রেকর্ড অব রাইটস)
- এসএ (ম্যাপ)
৩) আরএস খতিয়ান (Revisional Survey):
- ১৯৬০-৭০ সালে এসএ খতিয়ানের ত্রুটিগুলি সংশোধন এবং জমির মালিকানার পরিবর্তনগুলি আপডেট করার জন্য এই জরিপ পরিচালিত হয়।
- এই জরিপ এখনও চলমান।
৪) বিএস খতিয়ান (BS খতিয়ান / City Survey):
- ১৯৯৮-৯৯ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা শহরে জরিপ পরিচালিত হয়।
- এই জরিপে আরএস খতিয়ানের ত্রুটিগুলি সংশোধন করা হয়।
- এই জরিপ এখনও শহরাঞ্চলে চলমান।
জমির মালিকানা বের করার প্রয়োজন হয় কেন?
জমির মালিকানা বের করার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য: জমি ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ গ্রহণ, ভাড়া দেওয়া, জমির মালিকানা বিরোধ নিষ্পত্তি, আইনি জটিলতা সমাধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য খতিয়ান বা অন্যান্য বৈধ নথি প্রয়োজন হয়।
জমির খাজনা পরিশোধের জন্য: জমির মালিককে প্রতি বছর নির্ধারিত হারে খাজনা পরিশোধ করতে হয়। খতিয়ানে জমির পরিমাণ ও খাজনার হার উল্লেখ থাকে।
জমির মালিকানার পরিবর্তন: জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান, উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জমির মালিকানার পরিবর্তন করতে হয়। খতিয়ানে মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
জমির ব্যবহার: জমি কৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য জমির মালিকানা স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।
জমির বিরোধ নিষ্পত্তি: জমির মালিকানা বিরোধের ক্ষেত্রে খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম
জমির মালিকানা যাচাই করার দুটি প্রধান উপায় রয়েছে:
অনলাইনে:
ভূমি রেকর্ড এবং জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে:
- https://www.eporcha.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যান।
- “খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান” অপশনে ক্লিক করুন।
- নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে জমা দিন।
- আপনার খতিয়ানের তথ্য দেখতে পারবেন।
অফলাইনে:
ভূমি অফিসে:
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- খতিয়ানের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।
- ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে জমা দিন।
- নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
- কিছুদিন পর আপনার খতিয়ান ডেলিভারি দেওয়া হবে।
ইউনিয়ন পরিষদে:
- আপনার ইউনিয়ন পরিষদে যান।
- খতিয়ানের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।
- ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে জমা দিন।
- নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা জমির মালিকানা সম্পর্কে খোঁজখবর করবেন। কর্মকর্তা স্থানীয় খতিয়ান, দলিল, জরিপের নকশা, এবং অন্যান্য প্রমাণাদি পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজনের কাছেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। খোঁজখবর শেষে কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। প্রতিবেদনে জমির মালিকানা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
খতিয়ান বের করার নিয়ম বা কিভাবে জমির খতিয়ান উঠাবেন?
জমির খতিয়ান উঠানোর দুটি প্রধান উপায় রয়েছে:
অনলাইনে:
ভূমি রেকর্ড এবং জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট:
- https://www.eporcha.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যান।
- “খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান” অপশনে ক্লিক করুন।
- নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে জমা দিন।
- আপনার খতিয়ানের তথ্য দেখতে পারবেন।
অফলাইনে:
ভূমি অফিসে:
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- খতিয়ানের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।
- ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে জমা দিন।
- নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
- কিছুদিন পর আপনার খতিয়ান ডেলিভারি দেওয়া হবে।
ইউনিয়ন পরিষদে:
- আপনার ইউনিয়ন পরিষদে যান।
- খতিয়ানের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।
- ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে জমা দিন।
- নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
- কিছুদিন পর আপনার খতিয়ান ডেলিভারি দেওয়া হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- জমির দলিলের ফটোকপি (যদি থাকে)।
- নির্ধারিত ফি।
সাবধানতা:
অনলাইনে আবেদন করার সময় সঠিক ওয়েবসাইট ব্যবহার করা উচিত। অফলাইনে আবেদন করার সময় সঠিক কাগজপত্র জমা দেওয়া উচিত। জমির মালিকানা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।