বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশে এক পরিচিত গাছ লজ্জাবতী। ছুঁতেই যার পাতা লজ্জায় মুড়ে যায়, সেই গাছেই রয়েছে বহু প্রাকৃতিক চিকিৎসার উপাদান। আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় লজ্জাবতী গাছের গুরুত্ব বাড়ছে দিন দিন।শিশুদের কাছে এর পাতার ছোঁয়ায় মুচড়ে যাওয়া যেন এক চমকপ্রদ খেলা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই গাছটি শুধু কৌতূহলের নয়—এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণাগুণও।
বৈজ্ঞানিক নাম ‘Mimosa pudica’। এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। মূলত গাছটির পাতা, শিকড় এবং ফুল নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে।
লজ্জাবতী গাছ এক বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতাগুলো অনেকটা তেতুল পাতার মতো দেখতে এবং পাতার ফাঁকে ফুটে থাকা হালকা বেগুনি রঙের ফুল একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
এই গাছের পাতায় রয়েছে অ্যাড্রিনালিন জাতীয় উপাদান, টিউগুরিনস এবং মূলে থাকে ট্যানিন, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা নিরাময়ে কার্যকর।
দাঁতের মাড়ির ক্ষত সারায়
দাঁতের মাড়ির ক্ষত হলে লজ্জাবতী গাছের মূল ১৫–২০ সেমি নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে দিনে তিনবার কুলকুচি করলে মাড়ির ক্ষত সেরে যায় এক সপ্তাহের মধ্যেই।
পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর
লজ্জাবতীর বীজ থেকে তৈরি তেল নিয়মিতভাবে পুরুষাঙ্গে মালিশ করলে তা যৌন সমস্যা দূর করে এবং স্বাভাবিক যৌনজীবনে সহায়ক হয়। অনেক প্রাচীন হেকিম এই গাছের ব্যবহার করে থাকেন যৌন সমস্যার ঘরোয়া সমাধানে।
নারীদের জননস্বাস্থ্যেও উপকার
যোনিপথে ক্ষত বা স্রাবের সমস্যা থাকলে লজ্জাবতীর নির্যাস দুধ ও পানিতে সিদ্ধ করে দিনে দুইবার খেলে উপকার পাওয়া যায়। একাধিক সন্তান জন্মের পর যোনিদ্বারের শিথিলতা কমাতেও এর নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাতার নির্যাসে ভিজিয়ে রাখা ন্যাকড়া ব্যবহারেও সুফল মেলে।
আমাশয় ও কোষ্ঠকাঠিন্যে লজ্জাবতীর ভূমিকা
দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়ের রোগীদের জন্য লজ্জাবতীর ডাঁটা ও পাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ হলে তা পান করলে উপকার হয়। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে মূল সিদ্ধ করে সেই পানি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিকল্প চিকিৎসাবিদরা।
ঘামের দুর্গন্ধ কমায়
অনেকেই অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধ ও জামায় হলদে দাগ নিয়ে বিব্রত হন। লজ্জাবতীর ডাঁটা ও পাতার নির্যাস শরীরে মুছে নিলে ঘামের দুর্গন্ধ অনেকাংশে কমে যায়।
একটা গাছ, যা দেখলে মনে হয় শিশুদের খেলার বস্তু, প্রকৃতপক্ষে তা হতে পারে বহু রোগের ঘরোয়া সমাধান। লজ্জাবতী গাছ আমাদের প্রাকৃতিক ভাণ্ডারের এক অবহেলিত সম্পদ—যার সঠিক ব্যবহার জানলেই মিলতে পারে বহু শারীরিক সমস্যার আরাম।