২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল কাজের ভিসা কিভাবে পাবেন?

portugal work permit bangladesh

পর্তুগাল বর্তমানে ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় কর্মসংস্থানের কেন্দ্র, বিশেষ করে বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আগের তুলনায় সহজতর হলেও নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এই গাইডটি আপনাকে পর্তুগাল ওয়ার্ক ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবে।

পর্তুগালে কাজের ভিসার ধরন

পর্তুগালে বিভিন্ন ধরণের কাজের ভিসা রয়েছে, তবে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রধানত নিচের দুইটি ক্যাটাগরি বেশি গুরুত্বপূর্ণ:

  1. শ্রমিক ভিসা (Employee Visa – D1 Visa)
  1. পর্তুগালভিত্তিক কোম্পানি থেকে চাকরির অফার থাকতে হবে।
  2. নিয়োগকর্তা আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট অনুমতি দেবে।
  3. সাধারণত নির্মাণ, কৃষি, রেস্টুরেন্ট, ও পরিষেবা খাতে বেশি চাহিদা থাকে।
  4. স্বনিয়োজিত ভিসা (Self-Employment Visa – D2 Visa)
  1. যারা ছোট ব্যবসা শুরু করতে চান বা ফ্রিল্যান্স কাজ করতে চান তাদের জন্য।
  2. ব্যবসা সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে হয়।

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল কাজের ভিসার জন্য আবেদনের ধাপ

. চাকরির অফার সংগ্রহ করা

পর্তুগালের কাজের ভিসার জন্য প্রথম ধাপে আপনাকে একটি চাকরির অফার পেতে হবে। চাকরির অফার পেতে নিচের কয়েকটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন:

অনলাইন জব পোর্টাল:

পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে – যদি আপনার কোনো আত্মীয় বা বন্ধু ইতিমধ্যে পর্তুগালে কাজ করেন, তবে তাদের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ সম্পর্কে জানা সহজ হবে।

কোম্পানির ওয়েবসাইটে সরাসরি আবেদন – পর্তুগালের বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে চাকরির জন্য সরাসরি আবেদন করুন।

. চাকরির চুক্তি কাজের অনুমোদন (Work Permit – SEF Approval)

  • যখন আপনি একটি চাকরি পেয়ে যাবেন, তখন নিয়োগকর্তা পর্তুগালের ইমিগ্রেশন বিভাগ SEF (Serviço de Estrangeiros e Fronteiras)-এর মাধ্যমে আপনার জন্য কাজের অনুমোদন (Work Permit) আবেদন করবেন।
  • এই অনুমোদন পাওয়ার পর, আপনি পর্তুগাল কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

. পর্তুগাল কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

পর্তুগাল ওয়ার্ক ভিসার জন্য আপনাকে নিচের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে:

📌 আবেদন ফর্ম – পর্তুগালের দূতাবাস থেকে ডাউনলোড করতে হবে।
📌 চাকরির চুক্তিপত্র (Employment Contract) – নিয়োগকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত।
📌 ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন (SEF Approval)
📌 পাসপোর্ট – মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
📌 পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট – বাংলাদেশ পুলিশ থেকে নিতে হবে।
📌 স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance) – পর্তুগালে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।
📌 ব্যাংক স্টেটমেন্ট – আর্থিক অবস্থার প্রমাণ দেখাতে হবে।
📌 আবাসনের প্রমাণ (Accommodation Proof) – যেখানে থাকবেন তার ডকুমেন্ট।
📌 ভিসা আবেদন ফি – সাধারণত ৯০-১০০ ইউরো।

. বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাসে ভিসার আবেদন

পর্তুগাল ওয়ার্ক ভিসার জন্য আপনাকে ঢাকায় অবস্থিত পর্তুগাল দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় সকল কাগজপত্র ঠিকমতো প্রস্তুত করতে হবে।

🔹 পর্তুগাল দূতাবাস, ঢাকা
📍 ঠিকানা: হাউস #১৪৫, রোড #৭, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২
📞 ফোন: +৮৮০ ২ ৫৮৮১৫৪০১
🌐 ওয়েবসাইট: https://portaldascomunidades.mne.gov.pt

. ভিসা ইন্টারভিউ প্রসেসিং টাইম

  • দূতাবাস আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজন হলে ইন্টারভিউ ডাকতে পারে।
  • সাধারণত সপ্তাহের মধ্যে ভিসার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

আরও পড়ুন: পর্তুগাল টাকার মান কত

পর্তুগালে কাজের জন্য জনপ্রিয় সেক্টর

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পর্তুগালে বেশ কিছু সেক্টরে চাকরির ভালো সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিষেবা এবং লজিস্টিকস খাতে বাংলাদেশিদের চাহিদা বেশি। নিচে পর্তুগালে জনপ্রিয় কিছু কর্মসংস্থানের সেক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:

. নির্মাণ শিল্প (Construction Sector)

পর্তুগালে নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। রাজমিস্ত্রি, রডবাইন্ডার, প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি ও পেইন্টারসহ বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বেশি। অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে এই খাতে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। গড় মাসিক বেতন ,০০০,৫০০ ইউরো, যা অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরণ অনুযায়ী বাড়তে পারে।

. কৃষি খামার (Agriculture & Farming)

পর্তুগালে কৃষি ও খামার খাতে প্রচুর বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। ফল ও সবজি সংগ্রহ, খামার শ্রমিক এবং মুরগির খামারে কাজের জন্য দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। এই খাতে কর্মীরা গড়ে ৯০০,২০০ ইউরো মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। মৌসুমী ও স্থায়ী উভয় ধরনের চাকরির সুযোগ রয়েছে, যা অভিজ্ঞতা ও কাজের পরিমাণ অনুযায়ী বাড়তে পারে।

. হোটেল রেস্টুরেন্ট (Hospitality Sector)

পর্তুগাল একটি পর্যটননির্ভর দেশ, তাই হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপক। শেফ, কুক, ওয়েটার, বারিস্টা ও রুম পরিষ্কারক পদের জন্য নিয়োগ বেশি হয়। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে মাসিক বেতন ৯৫০,৫০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। পর্যটনের চাহিদা বাড়ার ফলে এ খাতে বিদেশি কর্মীদের সুযোগও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে জনপ্রিয় শহরগুলোতে।

. পরিষেবা পরিচ্ছন্নতা খাত (Cleaning & Maintenance)

পরিষেবা ও পরিচ্ছন্নতা খাতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। অফিস ও হোটেল ক্লিনার, বাড়ির পরিচ্ছন্নতা কর্মী, লন্ড্রি কর্মী ও গাড়ি পরিষ্কারক হিসেবে কাজের চাহিদা বেশি। এই খাতে অনেক বাংলাদেশি ইতোমধ্যেই কর্মরত, এবং নতুনদের জন্যও সুযোগ রয়েছে। গড়ে ৮৫০,২০০ ইউরো মাসিক বেতন প্রদান করা হয়, যা কাজের পরিমাণ ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে।

. লজিস্টিকস গুদাম শ্রমিক (Logistics & Warehouse)

পর্তুগালে অনলাইন শপ ও কোম্পানির গুদামে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। ডেলিভারি ড্রাইভার, গুদাম শ্রমিক ও মালামাল বহনকারী পেশায় নিয়োগ বেশি হয়। এই খাতে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। গড়ে ৯৫০,৩০০ ইউরো মাসিক বেতন দেওয়া হয়, যা কাজের ধরণ ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। এ খাতে মৌসুমী বা স্থায়ী চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।

. ফ্যাক্টরি উৎপাদন শিল্প (Manufacturing & Factory Work)

পর্তুগালে বিভিন্ন উৎপাদনকারী কারখানায় কাজের সুযোগ রয়েছে। টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি শ্রমিক, প্যাকেজিং শ্রমিক এবং মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই খাতে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোর কাছে। গড়ে ৯৫০,২০০ ইউরো মাসিক বেতন প্রদান করা হয়, যা কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে। ফ্যাক্টরি খাতে স্থায়ী ও মৌসুমী উভয় ধরনের চাকরি উপলব্ধ।

. ডেলিভারি রাইড শেয়ারিং (Delivery & Ride-Sharing Jobs)

পর্তুগালে অনলাইন ফুড ডেলিভারি এবং ট্যাক্সি সার্ভিসে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ফুড ডেলিভারি রাইডার (Uber Eats, Glovo) এবং উবার/বোল্ট ড্রাইভার হিসেবে কাজের চাহিদা রয়েছে। এই পেশাগুলিতে মাসিক বেতন ,০০০,০০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে, টিপসহ।

. গৃহকর্মী শিশু পরিচর্যা (Domestic & Caregiving Jobs)

পর্তুগালের অনেক পরিবার গৃহকর্মী ও শিশু-পরিচর্যার জন্য কর্মী নিয়োগ করে। গৃহকর্মী, বেবিসিটার ও বৃদ্ধদের দেখাশোনা করার পেশায় নিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। গড়ে ৯৫০,৩০০ ইউরো মাসিক বেতন প্রদান করা হয়, যা কাজের পরিমাণ ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে।

পর্তুগালে কাজের ভিসার সুবিধা

পর্তুগালে কাজের ভিসা পাওয়ার মাধ্যমে আপনি পরিবারসহ স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। ৫ বছর পর স্থায়ী বাসিন্দা (PR) হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, ইউরোপের অন্যান্য দেশে সহজে ভ্রমণ করার সুবিধা এবং ভালো আয়ের সুযোগও রয়েছে। পর্তুগালে কাজ করার মাধ্যমে আপনার কর্মজীবন উন্নতি করতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে ইউরোপে বসবাসের জন্য নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

FAQ – আপনার জিজ্ঞাসা

. পর্তুগালে কাজের ভিসার জন্য কত টাকা লাগে?

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার সরকারি ফি ৯০১০০ ইউরো, তবে অন্যান্য খরচ যেমন স্বাস্থ্য বীমা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ফ্লাইট টিকেট ইত্যাদি যোগ করলে আনুমানিক . লক্ষ টাকা লাগতে পারে।

. পর্তুগালে কোন সেক্টরে বেশি চাকরির সুযোগ রয়েছে?

নির্মাণ, কৃষি, হোটেলরেস্টুরেন্ট, পরিষেবা, লজিস্টিকস ফ্যাক্টরি খাতে বাংলাদেশি কর্মীদের বেশি চাহিদা রয়েছে।

. আমি কি পরিবার নিয়ে পর্তুগালে যেতে পারবো?

হ্যাঁ, D1 D2 ভিসার মাধ্যমে আপনি পরিবারসহ পর্তুগালে বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন

সতর্কতা প্রতারণা এড়ানোর টিপস

🚫 ভুয়া এজেন্সির ফাঁদে পড়বেন না।
🚫 ভিসার জন্য অযথা অতিরিক্ত টাকা প্রদান করবেন না।
🚫 সব সময় সরকারি ও বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য নিন।
🚫 নিজেই আবেদন করার চেষ্টা করুন, কোনো দালালের ওপর নির্ভর করবেন না।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল কাজের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হলেও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মানতে হয়। সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করলে আপনার পর্তুগালে কাজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।

আপনি যদি পর্তুগাল কাজের ভিসা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য চান, তাহলে বাংলাদেশের পর্তুগাল দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন অথবা একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *