ইউরোপজুড়ে চালু হচ্ছে নতুন ড্রাইভিং আইন: এক দেশে অপরাধ, সব দেশে শাস্তি

european union new rules for driving

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স নীতিমালা অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ইউরোপের সকল সদস্য দেশে সড়ক নিরাপত্তা জোরদার এবং গুরুতর ট্রাফিক অপরাধের শাস্তিতে সমন্বয় আনা হবে।

নতুন এই সংস্কার অনুযায়ী, একজন চালক যদি ফ্রান্সে অতিরিক্ত গতি বা স্পেনে মাদকসেবন অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতো অপরাধ করেন, তবে সেই অপরাধের সরাসরি প্রভাব পড়বে তাঁর নিজ দেশের (যেমন পর্তুগাল) লাইসেন্সের উপরও।

সীমানা পার হলেই শাস্তি এড়ানোর সুযোগ শেষ

ইউরোপীয় কাউন্সিল জানায়, এই নতুন নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো—কোনো একটি সদস্য দেশে শাস্তিপ্রাপ্ত চালক যেন কেবল সীমানা পার হয়ে আরেক দেশে গিয়ে শাস্তি এড়াতে না পারেন।

নির্দেশনাটি ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রস্তাব থেকে তৈরি হয় এবং ২০২৫ সালের মার্চে ইউরোপীয় সংসদ ও কাউন্সিল উভয়ই এটি অনুমোদন করে।

মূল পরিবর্তন: পারস্পরিক শাস্তি স্বীকৃতি

নতুন নিয়ম অনুসারে, একটি দেশে ড্রাইভিং নিষেধাজ্ঞা (suspension) আরোপিত হলে তা লাইসেন্স প্রদানকারী অন্য দেশেও কার্যকর হবে—যদি শাস্তির মেয়াদ তিন মাস বা তার বেশি হয়। অপরাধ সংঘটিত দেশের কর্তৃপক্ষকে এটি লাইসেন্স-প্রদানকারী দেশকে জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

স্বয়ংক্রিয় শাস্তি প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা

যদিও শাস্তির তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক, তবু স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব শাস্তি কার্যকর হবে না। যদি দেখা যায় যে অভিযুক্ত চালকের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তাহলে শাস্তি প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হবে।

যেসব অপরাধে লাইসেন্স স্থগিত হতে পারে

নতুন নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—মাদক বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত গতি, অথবা গুরুতর দুর্ঘটনায় আহত বা মৃত্যুর কারণ হলে সেসব অপরাধে EU-জুড়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করা যাবে।

লাইসেন্স পুনরায় পাওয়ার শর্তেও সমন্বিত নিয়ম

শুধু শাস্তি নয়, বরং শাস্তি শেষে লাইসেন্স পুনরায় পাওয়ার শর্ত ও সময়সীমার ক্ষেত্রেও ইউনিয়নভুক্ত সব দেশে এখন থেকে অভিন্ন নীতি প্রয়োগ হবে। এর ফলে কোনো চালক আর এক দেশে শাস্তি পেয়ে অন্য দেশে গিয়ে সহজেই নতুন লাইসেন্স নিতে পারবেন না।

সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধ করে পার পাওয়ার দিন শেষ

২০১৭ সালে EU-এর পরিবহন মন্ত্রীরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন—যে বিদেশি চালকদের অপরাধে শাস্তির হার খুব কম, তা সমাধানের লক্ষ্যে এই সংস্কার। ইউরোপীয় কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪০% বিদেশি চালকের ট্রাফিক অপরাধে কোনো শাস্তিই হয়নি।

এই সংস্কার এখনও চূড়ান্ত আইনি যাচাইয়ের অধীনে রয়েছে। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই এটি ইউরোপের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন ও জাতীয় আইনে পরিণত হবে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের মতে, নতুন এই বিধান কার্যকর হলে ইউরোপে একটি অধিক নিরাপদ, ন্যায্য ও স্বচ্ছ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে—যা সকল চালকের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *