বর্তমানে বাংলাদেশে টিন (TIN) সার্টিফিকেট এর ব্যবহার অনেক আংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। টিন সার্টিফিকেট প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য এখন অতি প্রয়োজনীয়। যেকোন ব্যবসা বা বিশেষ করে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে ব্যাংক লোন বা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে বা কর পরিশোধ করতে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। বর্তমান ডিজিটাল সময়ে সব কিছু অনলাইন ভিত্তিক।টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনাকে কোন অফিসে বা অন্য কোথাও যেতে হবে না। খুব সহজেই অনলাইনে এখন ই-টিন সার্টিফিকেটও তৈরি করা যায়। যেসকল নাগরিকগনের আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট থাকবে তারা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর নিবন্ধন করতে পারবেন। একজন ব্যক্তির নামে একাধিক টিন সার্টিফিকেট করা সম্ভব নয়। কেউ যদি আয়কর নিবন্ধন সার্টিফিকেট একবার করা হয়ে গেলে যে কোন সময় NBR ওয়েবসাইট থেকে লগইন এর মাধ্যমে আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
টিআইএন সার্টিফিকেট কি?
টিআইএন সার্টিফিকেট হলো একটি ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (Tax Identification Number)। এটি একটি বিশেষ নম্বর, যা বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক প্রদান করা হয়। এই নম্বরটি একজন করদাতাকে শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। টিআইএন সার্টিফিকেট থাকার অর্থ হলো আপনি একজন আইনি করদাতা।
আপনার কখন টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন?
এখন আমাদের মনে অনেকেরই প্রশ্ন জাগতে পারে যে টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে। আসলে সত্যি বলতে গেলে এই সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে তা বলে শেষ করা যাবেনা। এখন আমাদের দৈনন্দিক অনেক কাজেই এ টিন সার্টিফিকেট কাজে লাগে। আপনি যদি একজন বাংলাদেশের সচেতন সুনাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই e-tin সার্টিফিকেট করে নিতে হবে। আর যদি আপনি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই এই সার্টিফিকেট অত্যন্ত জরুরী। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই টিন সার্টিফিকেট আপনি কি কি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদেশে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন:
- ব্যাংক থেকে ঋণ বা লোন নেওয়ার জন্য
- ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য
- সরকারি চাকরি বা বেসরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য
- ব্যবসায়িক লাইসেন্স বা ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য
- সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য
- বিদেশে ভ্রমণের জন্য
বাংলাদেশে টিআইএন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
যদি আপনার বার্ষিক আয় যদি ৩৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলেই আপনি আয়কর এর তালিকাভুক্ত হতে হবে। আর আয়কর প্রদান করার জন্য আপনাকে টিন সার্টিফিকেট করে নিতে হবে। অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার জন্য যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. জাতীয় পরিচয়পত্র
২. নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বার
৩. কোম্পানীর ক্ষেত্রে আরজেএসসি নাম্বার মূলত এই তথ্যগুলো টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হয়।
ই-টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম (ধাপসমূহ)
ধাপ ১: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইটে যান।
NBR-এর ওয়েবসাইট হলো https://nbr.gov.bd/।
ধাপ ২: “ই-টিন” অপশনে ক্লিক করুন।
“ই-টিন” অপশনটি ওয়েবসাইটের বাম পাশে “সেবা” বিভাগে অবস্থিত।
ধাপ ৩: “ই-টিন রেজিস্ট্রেশন” অপশনে ক্লিক করুন।
“ই-টিন রেজিস্ট্রেশন” অপশনটি “ই-টিন” অপশনের নিচে অবস্থিত।
ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন।
আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি তথ্য পূরণ করুন।
ধাপ ৫: ছবি আপলোড করুন।
আপনার একটি স্পষ্ট ও পরিষ্কার ছবি আপলোড করুন।
ধাপ ৬: “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭: ফি প্রদান করুন।
আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট অনলাইনে করেন, তাহলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে। এই ফিটি NBR-এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা আছে।
ধাপ ৮: ফি প্রদানের পর, আপনার ফোন নম্বরে একটি OTP আসবে।
OTP-টি প্রবেশ করুন এবং “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৯: আপনার টিন নম্বর এবং পিন নম্বর প্রদর্শিত হবে।
আপনার টিন নম্বর এবং পিন নম্বরটি সংরক্ষণ করুন।
এইভাবে, আপনি খুব সহজেই অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে?
টিন সার্টিফিকেট করতে কোন লিগ্যাল ফী দরকার হয় না। আপনি NBR এর ওয়েবসাইট থেকে নিজেই করে নিতে পারেন আপনার টিন সার্টিফিকেট। এর জন্য কোন ফী লাগবে না।
টিন থাকলেই ট্যাক্স দিতে হবে কি?
না, টিন থাকলেই ট্যাক্স দিতে হবে না। টিন হলো একজন করদাতাকে শনাক্ত করার জন্য একটি নম্বর। আপনার যদি আয় থাকে এবং সেই আয়ের উপর ট্যাক্স দিতে চান, তাহলে আপনাকে টিন নিতে হবে। তবে, টিন থাকলেই আপনাকে অবশ্যই ট্যাক্স দিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি আপনার বার্ষিক আয় যদি ৩৫০,০০০ টাকার বেশি হয় তবে, আয়ের উপর ট্যাক্স দিতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম কি?
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি টিন নিবন্ধন বাতিলের আবেদনের জন্য ছয়টি শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হলো-
১. যে করদাতাদের কর রিটার্ন দাখিলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
২. মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি বা অনুরূপ কোনো কারণে করদাতা অস্তিত্বহীন হয়ে গেলে।
৩. করদাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং বাংলাদেশে তার আয় করার মতো কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে।
৪. ডুপ্লিকেট বা একাধিক নিবন্ধন অথবা ভুল তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন পেলে।
৫. কোনো কারণে আইনি মর্যাদা পরিবর্তন হলে।
৬. অন্য কোনো আইনানুগ কারণে টিন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে।
৭. টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য প্রথমে আপনাকে পর পর ৩ বছর শুন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এরপর আপনার Taxes Circle এর উপ-কর কমিশনার বরাবর উপযুক্ত কারণসহ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য দরখাস্ত করতে হবে। আবেদনের সাথে পূর্বের দাখিল করা রিটার্নের রিসিট, টিন সার্টিফিকেট ও এনআইডি কার্ডের কপি জমা দিতে হবে।
পরিশেষে, কর পরিশোধ করা একটি নাগরিক দায়িত্ব। এবং বাংলাদেশে কর পরিশোধ করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো টিন সার্টিফিকেট তৈরি। বর্তমানে এর পুরো কার্যক্রমই অনলাইনে হয়ে যাওয়ায় সবাই ঘরে বসেই কারো সাহায্য ছাড়াই এই টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। টিন সার্টিফিকেট (TIN) এই লেখাটি আপনাদের অনেকটাই সাহায্য করবে বলে আশাবাদী।