সরকারিভাবে নাগরিকদের ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করা হয়। শুরু থেকেই পরিচয়পত্রে বিভিন্ন রকম ভুলের অভিযোগ পাওয়া যায়। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে ভুল হলে নানারকম হয়রানিতে পড়তে হয়।এনআইডি কার্ডে কারো নাম, বয়স কিংবা বাবা- মার নামে নানান ভুল পাওয়া যায় আর এ নিয়ে নানান বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তবে খুশির খবরে এই যে এখন থেকে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ডে ভুল থাকলে এখন আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দিয়ে খুব সহজেই তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়। আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য কিছু প্রমাণাদি বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। আইডি কার্ডের কোন তথ্য সংশোধন করতে কোন কোন সনদ লাগবে এখানে তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের যাদের এনআইডি কার্ড আছে আমাদের অনেকের আইডি কার্ডটিই সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল থাকে না। নিজের নাম, কিংবা জন্ম তারিখ, অথবা বাবা মার নামে পাওয়া যায়। এনআইডি কার্ডের এই ভুল সংশোধন করার জন্যও বাংলাদেশ সরকার সংশোধনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য বেশ কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে যেগুলো আপনার সত্যতা প্রমানে কার্যকর।
এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগবে
- ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি
- পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স
- নাগরিক সনদ
- বিদ্যুৎ বিলের কপি
- জমির খারিজ/পর্চার কপি
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয় সাধারণ নাগরিক চারটি (০৪) ক্যাটাগরি তে তাদের নিজস্ব ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন। ক্যাটাগরি চারটি হচ্ছেঃ
- রক্তের গ্রুপ সংশোধন
- নাম সংশোধন (নিজের কিংবা পিতা মাতার)
- ঠিকানা সংশোধন
- জন্ম তারিখ সংশোধন
নিজের নাম সংশোধন
এটি প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায় যে কিভাবে আমার আইডি কার্ড এর নাম সংশোধন করা যায়। নাম সংশোধন এর তিনটি (০৩) ধাপ রয়েছে। নিজের নাম (আংশিক), পিতা/মাতার নাম (আংশিক) এবং নিজের কিংবা পিতা / মাতার নাম (সম্পূর্ণ)। ধাপে ধাপ ধাপে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নিজের নাম সংশোধন (আংশিক)
এনআইডি কার্ডের আংশিক নাম সংশোধনের জন্য জন্ম নিবন্ধনের কপি (অনলাইন কপি), বোর্ড পরীক্ষার সনদপত্র ( JSC, SSC, HSC), পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং কাবিননামা ইত্যাদি কাগজপত্র লাগে। আপনি যত ডকুমেন্ট দিবেন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ততই বাড়বে। তবে অবশ্যই এই সকল ডকুমেন্ট এর স্কান করে দিতে হবে। এই সেবা টি “ক” ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত যেটি আপনি সাধারণ উপজেলা পর্যায়ে নিষ্পন্ন করতে পারবেন।
নিজের নাম সংশোধন (সম্পূর্ণ)
আমাদের অনেকের ভোটার আইডি কার্ড এর নাম এর সাথে সার্টিফিকেট কিংবা জন্ম সনদের নামের মিল থাকে না। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বিশেষ করে জমিজমা রেজিস্ট্রেশনে এবং পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্যু করনে। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এটি “গ” (যদি প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দেয়া হয়) এবং “ঘ” (প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে অক্ষম হলে) ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ হলঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- জন্ম সনদ অনলাইন কপি
- সন্তানের এনআইডি কার্ড
- সন্তানের বোর্ড পরীক্ষার সনদপত্র
- এমপিও বা সার্ভিস বইয়ের কপি এবং
- উপজেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর প্রতিবেদন কপি ইত্যাদি।
পিতা/মাতারনামসংশোধন
এনআইডি কার্ড এ পিতা/মাতার নামে ভুল দেখা যায়। সাধারণত দুই ধরনের ভুল পরিলিখিত হয় । ভুলগুলো হচ্ছেঃ
- পিতা মাতার নামের বানান ভুল
- সম্পূর্ণ নামটিই ভুল
এই দুই ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য সাধারনত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হয় বাধ্যতামূলক হিসাবে। তবে এছাড়াও যে কাগজপত্র গুলো লাগে সেগুলো হচ্ছেঃ
- পাসপোর্ট
- পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড
- ভাই এবং বোনের এনআইডি কার্ড
- ভাই- বোন এর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
- কাবিননামা
জন্ম তারিখ সংশোধন
জন্ম তারিখ সংশোধনে অনেক সময় বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেকের জন্ম নিবন্ধন এর সাথে এনআইডি কার্ডের জন্ম তারিখের মিল খুজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রেও এনআইডি কার্ড এর জন্ম তারিখের অমিল লক্ষ করা যায়। এই ধরেনের বিড়ম্বনা এড়াতে আজই আপনার ভোটার আইডি কার্ডটি সংশোধন করে ফেলুন খুব সহজে ঘরে বসে। তার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র লাগবে তা হলঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- ভাইবোন এর এনআইডি ( যদি থাকে)
- অনলাইন জন্ম সনদ
- পারিবারিক সনদ পত্রের সত্যায়িত কপি
- বয়স প্রমানের রিপোর্ট
- চাকরি করলে চাকরির আইডি কার্ড এর কপি
ঠিকানা সংশোধন
ঠিকানা সাধারনত পিছনের অংশে থাকে, তাই আমাদের অনেকেই এটিকে গুরুত্ব সহকারে পরিবর্তন কিংবা সংশোধন করতে আগ্রহী প্রকাশ করি না। তবে জেনে রাখা ভাল এটি জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তাই আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত যে কিভাবে ঠিকানা সংশোধন করা যায় এবং কি কি কাগজ পত্র লাগবে ঠিকানা সংশোধন করতে। ঠিকানা সংশোধন সংশোধনের জন্য যা যা দরকার হবেঃ
- ঘরের গ্যাস/ বিদ্যুৎ/ পানি বিলের কপি
- বাসার ট্যাক্স রশিদ কিংবা গ্রামের ক্ষেত্রে জমির খাজনা
- প্রত্যয়ন পত্র
- ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সনদ এর কপি
এইসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, সংশোধনের ফি জমা দিয়ে সংশোধনের সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করলে এবং এনআইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন আনুমোদন পেলে আপনি অনলাইন থেকে NID Card Download করে সেটি ব্যবহার করতে পারবেন।