বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নতুন নির্দেশনায় জানিয়েছে, এখন থেকে একজন গ্রাহক তার নামে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। এত দিন পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ এবং পাসপোর্টের মাধ্যমে ১৫টি সিম নেওয়ার সুযোগ ছিল।
বিটিআরসি জানিয়েছে, দীর্ঘ পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ গ্রাহক এত বিপুল সংখ্যক সিম ব্যবহার করেন না। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় সংখ্যাটি ১০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৯ মে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কমিশন সভায় এই প্রস্তাব পাস হয় এবং অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম সিমের সর্বোচ্চ সংখ্যা ১৫ নির্ধারণ করেছিল বিটিআরসি।
বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৮ কোটিরও বেশি। তবে প্রকৃত নিবন্ধিত গ্রাহক ৬ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্রাহকের নামে পাঁচটির কম সিম রয়েছে। মাত্র ৩.৪৫ শতাংশ গ্রাহকের নামে ১১ থেকে ১৫টি সিম নিবন্ধিত।
এছাড়া, বিটিআরসি বেশ কয়েকজন গ্রাহকের সিম ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, যদিও তাঁদের নামে ১৫টি সিম রয়েছে, কিন্তু কার্যকরভাবে ব্যবহার হয় ৫-৬টি। অতিরিক্ত সিম রাখার সুযোগ অপারেটরদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা তৈরি করে, যা জাতীয় তথ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৯টি, পাকিস্তানে ৫টি, মালদ্বীপে ১০টি এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৩টি সিম নিতে পারেন। তাই এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তবে, বিটিআরসি জানিয়েছে যে, প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক ১০টির বেশি সিম ব্যবহার করছেন এবং তাঁদের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে নতুন নিয়মে। যেহেতু দেশের কিছু অঞ্চলে নারী ও প্রবীণরা নিজের নামে সিম নিতে সমস্যায় পড়েন, তাই এখনো বিকল্প পদ্ধতিতে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হবে।
প্রযুক্তি নীতিমালা বিশ্লেষক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, “বিটিআরসির সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই মূল চ্যালেঞ্জ। অসাধু বিক্রেতাদের আইনের আওতায় না আনলে সমস্যার সমাধান হবে না।”