টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি, যা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি রামসার সাইট, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শীতকালে এখানে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে, যা হাওরকে আরো বেশি মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
টাঙ্গুয়ার হাওর কখন যাবেন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সেরা সময় হলো শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)। এই সময়ে হাওরের জল কমে আসে এবং শীতের মিষ্টি হাওয়ার সঙ্গে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া, এই সময়ে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তবে বর্ষাকালে গেলে পুরো এলাকা জলে পরিপূর্ণ থাকে, যা হাওরকে একটি বিশাল জলরাশিতে পরিণত করে।
হাওর ভ্রমণে কি কি দেখবেন
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রধান আকর্ষণ হলো শীতকালে আসা পরিযায়ী পাখি। এছাড়াও, হাওরের চারপাশে সবুজ পাহাড়, ছোট ছোট দ্বীপ এবং স্থানীয় গ্রামগুলো পর্যটকদের মুগ্ধ করে। হাওরের জলে নৌকায় ভ্রমণ করতে পারেন এবং দূর থেকে পাহাড়ি ঝর্ণার ধারা উপভোগ করতে পারেন। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে আপনি হাওরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরও কিছু আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়াচ টাওয়ার, নীল জলরাশির শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক), লাল শিমুল ফুলের শিমুল বাগান, পাহাড়ি বারিক টিলা, ঐতিহাসিক লাউড়ের গড়, এবং যাদুকাটা নদী। এই স্থানগুলো টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণকে আরও সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করে তোলে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ইতিহাসকে একসঙ্গে উপভোগ করার সুযোগ দেয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ পৌঁছানো বেশ সহজ। সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুনামগঞ্জের সরাসরি বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। বাস ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম, এবং বাসে প্রায় ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌঁছানো যায়। বাস ছাড়াও মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কার ভাড়া করে যেতে পারেন।
সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর
সুনামগঞ্জ শহরে পৌঁছানোর পর, টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে হলে প্রথমে তাহিরপুর যেতে হবে। তাহিরপুর পর্যন্ত সিএনজি, মোটরবাইক বা মাইক্রোবাসে করে যাওয়া যায়, যার জন্য প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা সময় লাগে। তাহিরপুর থেকে সরাসরি নৌকা বা ট্রলারে করে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে নৌকা বা ট্রলারে করে পুরো এলাকা ঘুরে দেখা হয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভাড়া
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে নৌকা ভাড়া করতে হয়। ভ্রমণের ধরন অনুযায়ী নৌকা বা ট্রলারের ভাড়া ৩,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নৌকার আকার, ভ্রমণের সময়কাল এবং নৌকার সুবিধার ওপর নির্ভর করে এই ভাড়া পরিবর্তিত হয়। অনেক নৌকাতেই থাকার সুবিধা রয়েছে, তাই যারা টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত কাটাতে চান, তারা সহজেই এই ধরনের নৌকা ভাড়া নিতে পারেন। এছাড়া খাবারের ব্যবস্থা অনেক নৌকায় করা যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর হাউসবোট
এক সময় টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত্রি যাপন ছিল খুবই কষ্টদায়ক। বতর্মান সময়ে টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাওরের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনার কথা ছড়িয়ে পড়ায় হাওর পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেগ্যে তৈরি হচ্ছে সময় উপযোগি আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন নতুন হাউজবোট। বর্তমান সময়ে এসি, ননএসি জনপ্রিয় হাউজবোট সুবিধা রয়েছে। এগুলো হতে পারে আপনার টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে সেরা পছন্দ। বোট গুলোতে রয়েছে আধুনিক মানের সব সুযোগ সুবিধা। ডোর লক কেবিন, কেবিনের সাথে হাই কমোড ওয়াসরুম, প্রয়োজনীয় ডিভাইস সমূহের চার্জিং সুবিধা, সার্বক্ষনিক জেনারেটর ব্যবস্থা ও রুম সার্ভিস। সাথে একজন অভিজ্ঞ কো অর্ডিনেটর বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে উজবোটগুলো । জনপ্রিয় কিছু হাউজবোট বজরা, অভিযাত্রিক, বনেদি, গল্পতরী , হাওরে বাদশা।
হাজবোটগুলোর ভাড়াঃ
প্রিমিয়াম কাপল সুইট একটি কেবিন-জনপ্রতি-৯৫০০৳
প্রতি কেবিনে ২জন জনপ্রতি ৮৫০০৳
প্রতি কেবিনে ৩জন জনপ্রতি ৭০০০৳
ফ্যামিলি কেবিন (৪জন ক্যাপাসিটি) জনপ্রতি ৭০০০৳
টাঙ্গুয়া ভ্রমণের সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: হাওরে ভ্রমণের সময় ময়লা বা প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য না ফেলার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সজাগতা: বর্ষাকালে নৌকায় চলাচল কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই নিরাপত্তার বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে ভ্রমণ করলে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করা উচিত।
- ক্যামেরা ও ফোনের সুরক্ষা: হাওরের জল এবং বৃষ্টির কারণে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাই যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আসা উচিত।
- সিগন্যালের সমস্যা: হাওরের বেশ কিছু এলাকায় মোবাইল ফোন সিগন্যাল পাওয়া কঠিন হতে পারে, তাই আগে থেকেই পরিবার বা পরিচিতদের জানিয়ে যাওয়া ভালো।
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক ভ্রমণস্থল। পাহাড়, ঝর্ণা, পাখি, আর হাওরের জলরাশি মিলে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলে, যা পর্যটকদের মন ছুঁয়ে যায়।