ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে গেলে মনে হয় – “এইবার সত্যিই মনটা ভরে গেল।” বাংলাদেশের হবিগঞ্জের বাহুবলে অবস্থিত দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট ঠিক তেমনই একটি গন্তব্য। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিক জীবনের বাইরে সবুজ পাহাড়, ঝরনা, চা–বাগান আর আধুনিক সব লাক্সারি সুবিধা নিয়ে এই রিসোর্ট যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতার নাম।
ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের পথে
ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম সকালে। প্রথমেই বলি, দ্যা প্যালেসে পৌঁছানোর জন্য রোড ট্রিপটাই একরকম অ্যাডভেঞ্চার। ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের রাস্তা ধরে এগোতে এগোতে চা–বাগান, টিলা আর গ্রামীণ সৌন্দর্য চোখে পড়তে শুরু করে। প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার ভ্রমণের পর পুটিজুরী বাজারে নামলাম, সেখান থেকে সিএনজি রাইড করে পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের রিসোর্টে।
প্রথম দর্শনেই মুগ্ধতা
গেটে ঢুকতেই চোখে পড়লো বিশাল সবুজে ঘেরা পাহাড় আর বৃক্ষরাজি। প্রায় ১৫০ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রিসোর্টে হাঁটাহাঁটি করলেই মনে হয়, প্রকৃতির কোলে এক নতুন পৃথিবী খুঁজে পেয়েছি। চারপাশে আনারস বাগান, চা–বাগান, রাবার গাছ আর বিদেশি দেবদারু ও পাইনগাছ – সবকিছু এত সুন্দরভাবে সাজানো, যেন প্রকৃতি আর স্থাপত্য একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে।
বিনোদনের অশেষ আয়োজন
এখানে এসে বোর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খেলাধুলা থেকে শুরু করে রিলাক্সেশনের জন্য আছে অসংখ্য ব্যবস্থা।
- ইনফিনিটি সুইমিং পুলে সময় কাটানো সত্যিই অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
- কিডস জোন, গেম জোন, ফিশিং লেক – বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়রা সবাই ব্যস্ত থাকবে।
- সন্ধ্যায় সিনেমা দেখতে চাইলে রয়েছে আধুনিক সিনেপ্লেক্স।
- যারা একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা চান, তারা সাইকেল চালাতে পারেন কিংবা হেলিকপ্টার রাইডেও ঘুরতে পারেন। (হ্যাঁ, সত্যিই হেলিকপ্টারে ঘুরার ব্যবস্থা আছে!)
আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে – চারদিকে হাঁটার পথ আর বাগি কার সার্ভিস, যা দিয়ে সহজেই পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখা যায়।
থাকার অভিজ্ঞতা
আমি থেকেছিলাম টাওয়ার বিল্ডিংয়ে। রুমের আরামদায়ক পরিবেশ, ব্যালকনি থেকে সবুজ পাহাড় দেখার সুযোগ – সত্যিই মনে হচ্ছিলো যেন কোনো বিদেশি রিসোর্টে আছি। তবে যদি বাজেট একটু বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই ভিলাতে থাকা উচিত। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই ভিলাগুলো শুধু থাকার জায়গা নয়, বরং ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
খাবারদাবার
রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ করার সময়টা বেশ উপভোগ্য ছিল। নানা রকম দেশি-বিদেশি খাবারের আয়োজন থাকলেও আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে স্থানীয় ফ্লেভারের খাবারগুলো। সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট – সেটিও দারুণ।
প্যালেস রিসোর্ট রুম ভাড়া – The Palace Resort Room Price
ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো থাকার জায়গার বাজেট। দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে বিভিন্ন ধরণের রুম ও ভিলা রয়েছে, যেখানে প্রতিটি ক্যাটাগরির দাম ভিন্ন ভিন্ন। আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন পছন্দের অপশন। আপনি চাইলে প্যালেস রিসোর্টের অফিসিয়াল রুম ট্যারিফ চার্ট দেখেও সব রুমের ভাড়া এবং অফারের বিস্তারিত জানতে পারেন।
- টাওয়ার বিল্ডিংয়ের রুম ভাড়া শুরু হয় প্রায় ১৩,০০০ টাকা থেকে।
- ভিলার ভাড়া ২০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- তবে এই দামের সাথে ব্রেকফাস্ট, লাক্সারি সার্ভিস আর প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য – সবকিছু মিলে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেয়।
আমার অনুভূতি
দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে কাটানো সময়গুলো ছিল স্মরণীয়। মনে হয়েছিলো, প্রকৃতির কোলের মধ্যে থেকেও আধুনিকতার সব সুবিধা একসাথে পাচ্ছি।
📌 যারা পরিবার নিয়ে অবকাশ যাপন করতে চান, অথবা দম্পতিদের জন্য রোমান্টিক গেটওয়ে খুঁজছেন – তাদের জন্য এটি হতে পারে পারফেক্ট ডেস্টিনেশন। আর হ্যাঁ, ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই একবার ঘুরে আসার মতো জায়গা।