ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার জন্য এতদিন গুগল ছিল সবার প্রথম পছন্দ। কিন্তু এখন ছবিটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। অনেকেই গুগলের বদলে ব্যবহার করছেন চ্যাটজিপিটি—একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত ভাষা মডেল।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল শুধু তথ্য দেয় না, বরং আলাপচারিতার ভঙ্গিতে সরাসরি সমাধান দেয়, যা সময় ও পরিশ্রম দুটোই বাঁচায়।
একজন ব্যবহারকারী বলেন,
“আগে রুম সাজানো বা রান্নার আইডিয়ার জন্য গুগলে সার্চ করতাম। এখন সরাসরি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করি—উত্তরটা কথার মতো আসে, লিংক ঘেঁটে দেখতে হয় না।”
অনেকে আবার এটিকে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ব্যবহার করছেন—ইমেইল লেখা, সফটওয়্যার বেছে নেওয়া, বা ছোটখাটো কোড লেখার মতো কাজে।
চ্যাটজিপিটির ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে
গবেষণা প্রতিষ্ঠান Demandsage জানায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন। কয়েক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি।
অন্যদিকে Datos-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ডেস্কটপ ব্রাউজারে মোট অনুসন্ধানের প্রায় ৬ শতাংশই হচ্ছে এআই মডেল বা এলএলএম (LLM)-এর মাধ্যমে—যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ হলো—চ্যাটজিপিটি মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের মতো সহজভাবে তথ্য দেয়, যা গুগল সার্চের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহারবান্ধব।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: কমছে মানসিক চাপ
লন্ডনের বেইজ বিজনেস স্কুলের এক গবেষকের মতে, মানুষ এখন এআই ব্যবহার করছে কারণ এটি “কগনিটিভ লোড” বা মানসিক চাপ কমায়।
“গুগলে দশটা লিংক ঘেঁটে দেখতে হয়, কিন্তু চ্যাটজিপিটি সরাসরি সারাংশ বা সমাধান দিয়ে দেয়। এতে সময় বাঁচে এবং মনোযোগও থাকে এক জায়গায়,” বলেন তিনি।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এআই-এর দেওয়া তথ্য সবসময় শতভাগ নির্ভুল নয়। তাই ব্যবহারের আগে যাচাই করা জরুরি।
গুগলের পাল্টা উদ্যোগ: সার্চে এআই সংযোজন
চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বাড়লেও গুগল দাবি করছে, তাদের সার্চ ব্যবহারের হার এখনো বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে নতুন AI Mode ও AI Overviews ফিচার, যা সার্চের ফলাফলকে আরও সংক্ষিপ্ত ও কথোপকথনধর্মী করে তুলছে।
তবে সাম্প্রতিক এক মার্কিন অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় প্রকাশ পায়, অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজারে গুগল সার্চ ব্যবহার প্রথমবারের মতো কমে গেছে, যা ব্যবহারকারীর অভ্যাসে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে সার্চ ইঞ্জিন ও এআই—দুটিই একসঙ্গে চলবে।
“মানুষ সৃজনশীলতা ও ধারণা তৈরিতে এআই ব্যবহার করবে, আর কেনাকাটা বা তথ্য যাচাইয়ের জন্য থাকবে গুগল সার্চ,” বলেন এক বিশ্লেষক।
বিপণন জগতে নতুন কৌশল
এআই ব্যবহারের বিস্তারে ব্যবসাগুলোকেও বদলাতে হচ্ছে। এখন ব্র্যান্ডগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে—কোন উৎসগুলোকে এআই মডেল ‘বিশ্বস্ত’ মনে করে, তা বোঝা।
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ বলেন,
“বিউটি বা ফ্যাশন খাতে এআই সাধারণত ভোগ বা সেফোরার মতো স্বীকৃত মিডিয়া ও রিভিউ সাইটের কনটেন্ট ব্যবহার করে। তাই ব্র্যান্ড ওয়েবসাইট ও প্রেস রিলিজে জোর দিতে হবে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, এআই থেকে আসা ট্রাফিকের কনভারশন রেট বা বিক্রিতে রূপান্তরের হার বেশি, যা মার্কেটিংয়ের জন্য বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
দৈনন্দিন জীবনে এআই সহকারী
ভ্রমণ পরিকল্পনা, রেসিপি, পোশাক পরামর্শ কিংবা ত্বকচর্চার উপায়—সবকিছুর উত্তর এখন চ্যাটজিপিটিতে।
একজন তরুণ ব্যবহারকারী বলেন, “সম্প্রতি ভ্রমণের জন্য পুরো ট্রিপ প্ল্যান করতে বলেছিলাম চ্যাটজিপিটিকে। কয়েক মিনিটেই রেস্টুরেন্ট, পরিবহন আর হোটেল সাজেস্ট করল। আগে এই কাজেই ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যেত।”
নতুন যুগের অনুসন্ধান
বিশেষজ্ঞদের মতে, চ্যাটজিপিটি গুগলকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করবে না, তবে এটি অনুসন্ধানের ধরন বদলে দিচ্ছে।
এখন মানুষ শুধু “লিংক খোঁজে” না, বরং “উত্তর চায়”—এবং এআই সেই উত্তর দেয় কথার ভঙ্গিতে, মুহূর্তেই।
“আগে সার্চ মানে ছিল তথ্য খোঁজা, এখন সার্চ মানে হচ্ছে কথোপকথনের মাধ্যমে সমাধান পাওয়া,” বলছেন এক বিশ্লেষক।